অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে গত ১০ মাসে দেশে ৪৩৭টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৭৬ জনকে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে হত্যা করা হয়েছে। এর বাইরে গুমের শিকার হয়েছে আরো ২৬ জন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের এই সংখ্যা গত ৬ বছরের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ। সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাথে যৌথভাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠক থেকে এই তথ্য জানানো হয়। মানবাধিকরা সংগঠনগুলো আশংকা করছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।
বিশেষ করে এই গোলটেবিল আলোচনা থেকে নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ারও আশংকা ব্যক্ত করা হয়। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা জানান, আইন থাকলেও তার পর্যাপ্ত প্রয়োগ না থাকায় দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছেনা। আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হক জানান, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ইতোমধ্যেই দেশের সকল ডিসি ও এসপিকে কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠিও দেয়া হয়েছে।
আলোচনায় উঠে আসে ২০১৭ সালে ১৬২ জন মানুষকে বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ কাস্টডিতে থাকা অবস্থায়ও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিল ১৯৫টি, ২০১৫ সালে ১৯২টি, ২০১৪ সালে ১৫৮টি এবং ২০১৩ সালে ২০৮টি। তাছাড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩০০টি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় তদন্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রতি আহবান জানালেও এখন পর্যন্ত এই ব্যপারে মন্ত্রনালয় থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বলেও আলোচনায় জানানো হয়।
গোলটেবিল আলোচনায় বার বারই মানবাধিকার কমিশনের ব্যর্থতার চিত্র ফুটে উঠে। জানা যায় ২০০৭ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠিত হলেও তারা এখনও অবধি মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্যকর ভুমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। গোলটেবিলের আলোচকেরা বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড এবং গুম ও অপহরনের বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ না নেয়ায় মানবাধিকার কমিশনের তীব্র সমালোচনা করেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য সরকারের নির্বাহী বিভাগের প্রতি আহবান জানায়। সেই সাথে তারা কমিশনের প্রতিও আরো বেশী জনমুখী হওয়ার আহবান জানায় যাতে ভুক্তভোগী সহজেই তাদের অভিযোগ নিয়ে কমিশনের শরনাপন্ন হতে পারে।
আলোচনায় বলা হয়, সম্প্রতি শেষ হওয়া কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবীতে হওয়া আন্দোলনের সময় কমিশন সরব থাকলেও এসব আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রছাত্রীদের উপর যখন নিপীড়ন চালানো হলো তখন কমিশন সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে পারেনি। এমনকি এসব নিপীড়ন বা নির্যাতনের ঘটনায় কমিশন কোন তদন্তও সম্পন্ন করেনি।
সেই সাথে মূল ধারার মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত হত্যাকান্ড বিশেষত তনু হত্যা, মারমা শিশু ধর্ষন, রোমেল চাকমা হত্যা এবং কক্সবাজারের পৌর কাউন্সিলর একরামের হত্যায় সক্রিয় থাকলেও কমিশন এসব হত্যার তদন্তের অগ্রগতি সাধনে তেমন কোন ভুমিকা রাখতে পারেনি।
আসকের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনই আমাদের শেষ ভরসাস্থল। তারা যত সক্রিয় থাকবে দেশের মানুষের মানবাধিকার ততটাই সংরক্ষিত থাকবে।
এসব সমালোচনার জবাবে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হক বলেন, নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়েই কমিশনকে কাজ করে যেতে হচ্ছে। কমিশনের নিজস্ব লোকবলেরও ভীষণ অভাব। আশা করা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই কমিশনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনশক্তি নিয়োগ দেয়া হবে আর তখন কমিশনের সেবার মানেরও উন্নতি ঘটবে।